জেলা প্রতিনিধি।। খাগড়াছড়ি।।
ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসু উৎসব প্রতিবছর ৩ দিন ধরে উদযাপন করা হয়। প্রথম দিনকে ‘হারি বৈসু’, দ্বিতীয় দিনকে ‘বৈসুমা’ বা মূল বৈসু, এবং তৃতীয় দিনকে ‘বিসিকাতাল’ বলা হয়। বৈসু উৎসবের প্রথম দিনটি ত্রিপুরা জনগণের অন্যতম তীর্থস্থান, মাতাই পুখিরী তীর্থ মেলার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই দিনে লাখো দর্শনার্থী মাতাই পুখিরী তীর্থস্থানে ভিড় জমায়।
রবিবার (১৩ এপ্রিল, ২০২৫) সকালে মাতাই পুখিরী তীর্থ মেলা ২০২৫ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জনাব জিরুনা ত্রিপুরা। রঙিন বেলুন ও রঙিন পায়ড়া উড়িয়ে তিনি মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় মেলায় প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী জমায়েত হয়েছে বলে জানান আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ির ২০৩ পদাতিক ব্রিগেড ও রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মোঃ আমান হাসান। এছাড়া খাগড়াছড়ি সদর জোনের কমান্ডার লেঃ কর্ণেল মোঃ খাদেমুল ইসলাম, পিএসসি, মহালছড়ি সেনা জোনের কমান্ডার, মাতাই পুখিরী উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা নবলেশ্বর ত্রিপুরা লায়ন, উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক জ্ঞান দত্ত ত্রিপুরা ও সদস্য সচিব পিন্টু ত্রিপুরাসহ সেনা রিজিয়নের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ত্রিপুরাদের ঐতিহাসিক তীর্থস্থান মাতাই পুখিরী, যা ত্রিপুরা ভাষায় ‘দেবদীঘি’ বা ‘দেবতা পুকুর’ নামে পরিচিত, খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে প্রায় ১২ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে আলুটিলা পর্বতশ্রেণীর মধ্যে অবস্থিত। মাতাই পুখিরী তীর্থ স্থানটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ১৫১২ খ্রিষ্টাব্দে মহারাজা ধন্য মানিক্যের সেনাপতি রায়কাচাকের আক্রমণের সময় ত্রিপুরা সৈন্যদের দ্বারা এটি খনিত হয়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে, ভূ-বিজ্ঞানীরা মনে করেন এটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে।
১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মহারাজা গোবিন্দ মানিক্য শিব পূজা শেষে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ বিসর্জন দেওয়ার মাধ্যমে মাতাই পুখিরীকে তীর্থস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তারপর থেকেই মাতাই পুখিরী ত্রিপুরা জনগণের এক ঐতিহাসিক তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
এতদিনের ঐতিহ্য ও মহারাজার আধ্যাত্মিক অবদানকে স্মরণ করে, ত্রিপুরা জনগণের মাতাই পুখিরী তীর্থ মেলা প্রতিবছর অত্যন্ত উৎসাহ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদযাপন করা হয়। এটি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং ত্রিপুরা জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক গৌরবেরও প্রতীক।
মাতাই পুখিরী তীর্থ মেলা এবং বৈসু উৎসব ত্রিপুরা জনগণের জন্য এক ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। এই মেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় উদযাপন নয়, ত্রিপুরা জনগণের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সমাজের এক অমূল্য রত্ন হিসেবে পরিচিত।
সম্পাদক: হ্লাথোয়াইচিং মারমা (ভদন্ত নাইন্দিয়া থের)
নির্বাহী সম্পাদক: মংহাইথুই মার্মা
প্রধান কার্যালয়ঃ রুমা বাজার, মসজিদ গলি,রুমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।
অফিস হটলাইন নাম্বার: +8801606760388
ইমেইল : rumabarta23@gmail.com